১৯ বা ২১ দিনে কখনও মাস হয়, না হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে হয়তো এটি সম্ভব না। কিন্তু আপনি যদি পলাশীর যুদ্ধের ৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৫২ সালে ফিরে যান তাহলে দেখবেন ১৭৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসটি ছিল ১৯ দিনের। কি অবাক হচ্ছেন? যাই হোক আমরা এখন খুঁজে দেখি আসলে কি ঘটেছিল ১৭৫২ সালে?
১৭৫২ সালের পূর্বে ইংল্যান্ডে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত ছিল। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এক বছর ধরা হতো ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টাকে। অন্যদিকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডকে ধরা হয় এক বছর। ইউরোপের অন্যান্য দেশে ১৭৫২ সালের আগেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে তখনও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হতো। ফলাফলস্বরূপ ইংল্যান্ডের জনগণ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে তারিখের বিভ্রান্তির শিকার হতে থাকে। আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে প্রায়ই সমস্যার সৃষ্টি হতো।
অবশেষে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংস্কার করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে দ্বিমত পোশন করেন, কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সুবিধার কথা চিন্তা করে সকলেই মেনে নিতে বাধ্য হয়। হিসেব করে দেখা যায়, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংল্যান্ড প্রায় ১১ দিন পিছিয়ে ছিল। এর সমধান হিসেবে ২ সেপ্টেম্বরের পর জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বর্জন করা হয়, ৩ সেপ্টেম্বরকে ৩+১১ অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর হিসাব করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়।
২ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডবাসী সবধরনের দপ্তরিক কাজে ২ সেপ্টেম্বর ব্যবহার করে। পরিশ্রান্ত ইংল্যান্ডবাসী ২ সেপ্টেম্বর রাতে ঘুমালেও তাদের ঘুম ভাঙে ১৪ সেপ্টেম্বরে। মাত্র এক রাতের ব্যবধানে ১১টি দিন হারিয়ে গেল ইংল্যান্ডের ইতিহাস থেকে। ১৭৫২ সালের ৩ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর, এই দিনগুলোতে সত্যিই ইংল্যান্ডে কোন শিশুর অগমনী ধ্বনি বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়নি। বিগত বছরগুলোতে ৩ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর যাদের জন্ম হয়েছিল ওই বছর তাদের জন্মদিনের আনন্দ ছাড়াই বয়স এক বছর বেড়ে গিয়েছিল।
পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির নির্দেশ অনুযায়ী ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে প্রথম প্রচলিত হয় ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’। একদম প্রথম দিকে ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি এবং পোল্যান্ড এই ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা শুরু করে। এসব দেশে ঐ বছর ৪ অক্টোবর পর্যন্ত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। পরে সরাসরি টাইম ট্রাভেল করে চলে যাওয়া হয় ১৫ অক্টোবরে। অক্টোবর মাস থেকে ১০ দিন গায়েব করে দিয়ে ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের দিন, মাস, সাল গণনা।
পরবর্তীতে আরো নতুন নতুন দেশ এই ক্যালেন্ডার অনুসরণকারীদের তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। পুরো সাড়ে ৩০০ বছর ধরে সারা বিশ্বে চলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের অনুসরণকারীদের খাতায় নাম লেখানোর কাজ। যেমন-
জার্মানি (প্রুশিয়া) এই ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে ১৬১০ সাল থেকে (ক্যালেন্ডার হতে বাদ দেয় ১০ দিন)। আমেরিকা, কানাডা এবং ইংল্যান্ড শুরু করে ১৭৫২ সালে (বাদ দেয় ১১ দিন)
জাপান শুরু করে ১৮৭২/১৮৭৩ সালে (বাদ দেয় ১২ দিন)
এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ছিলো তুরস্ক। তারা ১৯২৬/১৯২৭ সালে এই ক্যালেন্ডার অনুসরণ শুরু করে (বাদ দেয় ১৩ দিন)
জুলিয়ান হতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে পরিবর্তনের সময় স্বভাবতই বিভিন্ন দেশের ইতিহাসে উদ্ভট সব মাসের আবির্ভাব হতে থাকে। এই সব মাসের দৈর্ঘ্য ছিলো ১৮-২০ দিন। তদুপরি ১৭১২ সালে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে ফেব্রুয়ারি মাস ছিলো ৩০ দিনে। অর্থাৎ ১৭১২ সালে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে ডাবল লিপ ইয়ার ছিলো। বর্তমানে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের থেকে ১৩ দিন এগিয়ে আছে।