প্রথমে আমি ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে Paypal নিয়ে এই পর্বটি লিখতে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন এবং উৎসাহিত করেছেন। ১ম পর্বের পর যাদের ফোন ধরতে পারি নাই বা ইনবক্সে রিপ্লাই দিতে পারি নাই। দয়া করে ক্ষমা করবেন। কারণ আমি এত রেস্পন্স আশা করি নাই। প্রচুর মানুষ ফোন দিয়েছেন। সবাইকে হয়ত হেল্প করতে পারি নাই।
সবচাইতে বেশি যে প্রশ্ন টা করা হয়েছে। তা হল- পেপাল এর নতুন আপডেট এ কি আছে ?
তেমন কিছুই না। আবার অনেক কিছু। এই আপডেট থেকে পেপাল তার সেলারদের সার্থ রক্ষার উপর গুরুত্ব দিবে। যেটা আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সার দেড় জন্য একটা বড় সুসংবাদ। কারণ এখন কোন ক্লাইন্ট চাইলেই ডিসপুট দিতে পারবে না। তাকে প্রপার এভিডেন্স সাবমিট করতে হবে ডিসপুট ওপেন করার জন্য। অন্যদিকে, যেহেতু Paypalসেলারদের সিকিউরিটি দিবে। তাই তারা বায়ারদের একাউন্ট কে ভালমত ভেরিফাই করবে। যাতে কোন কারনে বায়ার সেলার কে ঠকাইতে না পারে । অথবা পেপাল প্রয়োজনে লিগ্যাল একশন নিতে পারে। ফলে পেপাল প্রতিটা একাউণ্ট এর মালিককে ভালো মত চেক করবে। কারণ প্রত্যেক একাউন্ট হোল্ডার একজন বায়ার। যার ফলে ফেক একাউন্ট বাদ যাবে। হয়ত সময় লাগতে পারে কিছুদিন। তাই ১৯ তারিখ একাউন্টের কিছু না হলে খুব বেশি খুশি হওয়ার কিছু নাই।
টপিক : ফেক Paypal এর প্রকারভেদ –
যেহেতু আমাদের দেশে Paypal অনুমোদিত নয়। কিন্তু পেপাল ছাড়া অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার অচল। তাই সবাই কম বেশি ফেক Paypal ব্যবহার করে। আমিও করেছি।
ফেক পেপাল এর কয়েকটা প্রকার আছে।
১ম টাইপ : ব্ল্যাক হ্যাট ফোরাম থেকে, চুরি করা অন্যের তথ্য কিনে পেপাল বানানো। ২০১২-১৫ সালে ফোরাম গুলোর কল্যানে এই মেথড সব চাইতে জনপ্রিয় ছিল। এখন তা বাতিল হয়ে গেছে। তবে এখনও অন্যের SSN পাওয়া যায়।
২য় টাইপ : আমাদের দেশে সব চাইতে প্রচলিত। VCC (ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড ) ও VBA (ভার্চুয়াল ব্যাঙ্কক একাউন্ট ) দিয়ে ভেরিফাই করা একাউন্ট । এক্ষেত্রে দুই ধরণের একাউন্ট হয়। একটা অন্যের নামে। আরেকটা নিজের নাম করা। নিজের নাম দেখলে কার না ভাল লাগে !! যারা এই ধরণের একাউন্ট সার্ভিস দেন। তাদেরকে আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। কারন উনারা না থাকলে আমাদের কিন্তু কোন ধরণের পেপাল পাওয়ার উপায় ছিল না। যদিও এর নেগেটিভ দিক আছে। সেটা আপাতত আমরা ভুলে যাই।
৩য় টাইপ: বাংলাদেশে বসে ইউরোপের কিছু দেশে বিজনেস Paypal খোলা এবং ২ নং নিয়মে ভেরিফাই করা। এখানেও একাউন্ট একবার লিমিট হলে আপাত দৃষ্টিতে আপনার টাকার আশা ছাড়তে হবে। কারণ পেপাল ডকুমেন্ট দিয়ে ভেরিফাই করতে বলতে পারে।
টপিক : ভাই ফেক পেপাল কতটা নিরাপদ ?
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমি পেপাল এর ভেরিফিকেশন মেথড নিয়ে কথা বলা দরকার মনে করছি। তাহলে অনেক প্রশ্নের উত্তর এমনিই চলে আসবে।
Paypal মোটামুটি ৬-৮ এই প্রকার ভেরিফিকেশন করে থাকে।
লেভেল ওয়ান –
নতুন একাউন্ট করার সময় নিচের প্রথম তিনটি ভেরিফিকেশন করে নিলে একাউন্টকে সেফ একাউন্ট মনে করা যায়।
১. ব্যাঙ্ক ভেরিফিকেশন – পেওনিয়ার বা ভার্চুয়াল/রিয়েল ব্যাঙ্ক একাউন্ট ব্যবহার করে ভেরিফাই করা।
২. কার্ড ভেরিফিকেশন -পেওনিয়ার বা ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার করে ভেরিফাই করা।
৩. ফোন নাম্বার ভেরিফিকেশন – অনেক এপ্স আছে। তাই লিখা দরকার মনে করলাম না।
এই ভেরিফিকেশন গুলো করে একাউন্ট চালালে একাউন্ট মোটামুটি নিরাপদ বলে মনে হয়। যাদের অল্প ট্রান্সেকশন -২০-৫০$ করে মাসে ২০০-৩০০$ লেনদেন করেন। তারা এই একাউন্ট গুলো ইউজ করে কাজ চালাইতে পারেন বা পেরেছেন। অনেকেই কয়েক হাজার ও ট্রান্সেকশন করেছেন। এই রকম উদাহরণ আছে।
(তবে দয়া করে ফেক ইনফো না দিয়ে রিয়েল ইনফো দিয়ে করুন। যেমন -নাম ও এড্রেস ইত্যাদি। কেন সেটা পুরো পোস্ট পড়ার বুজতে পারবেন। )
তবে আমার মতে বড় এমাউন্ট ফেক একাউন্ট দিয়ে না চালানো ভাল । আপনার টাকা ,আপনার ইচ্ছা। কারণ আপনি মাসে ৫০০+ আয় করতে পারলে এই সব ফেক বিষয় থেকে দূরে থাকা উচিৎ ।কারন ২০০-৪০০০/৫০০০ সহ একাউন্ট ও ইদানিং লিমিট হচ্ছে। আপনার একটা বড় পেমেন্ট আটক সহ একাউন্ট লিমিট হতে পারে।
যদি কোন কারণে পেপাল একাউন্ট লিমিট করে দেয় এবং আজকাল হরহামেশাই দিচ্ছে। তাহলে এই একাউন্টে থাকা ডলার ১৮০ দিন আটকে থাকবে । তারপর কিছু কিছু একাউন্ট থেকে টাকা তুলে ফেলা যায় । তবে সব একাউন্ট থেকে তোলা যায় না। ভাগ্য ভালো হলে আপনি তুলতে পারবেন।
তারপর ধরুন –
যদি কোন কারনে Paypal আপনার একাউন্ট লিমিট করে বা আপনার একাউন্ট ম্যানুয়াল রিভিউতে পরে তখন পেপাল নিচের ডকুমেন্টগুলো ভেরিফাই করতে বলবে। এটাকে আমরা ভেরিফিকেশন লেভেল ২ বলতে পারি – এই লেভেলে নিচের জিনিসগুলো চাইতে পারে।
৪. এড্ড্রেস ভেরিফিকেশন- আপনাকে যে কোন ইউটিলিটি বিল জমা দিতে হবে। এখন যদি আপনি ফেক এড্রেস দিয়ে আইডি খুলে থাকেন ,তাহলে আপনার একাউন্ট কে বাই বাই জানাতে হবে। কারন ইউ এস এ তে এড্রেস আসল না নকল বের করা কঠিন কিছু না।ফেক একাউন্ট এর ক্ষেত্রে তেমন কিছুই করার থাকে না।
৫. পার্সোনাল আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশন – আপনাকে SSN বা এই টাইপ আইডি যুক্ত করতে বলবে। অনেকেই ফেক SSN যুক্ত করে থাকে। এইটা আরো ভয়ংকর হবে। কেননা যদি Paypal আপনার কাছে SSN কে ভেরিফাই করার জন্য আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স বা এই রকম কোন ডকুমেন্ট চায় ।এবং আপনি যদি তা দিতে না পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার টাকা বায়েজাপ্ত হওয়ার মারাত্ত্বক সম্ভাবনা রয়েছে।
৬.পেমেন্ট ভেরিফিকেশন- আপনার কাছে ট্রান্সেকশন আইডি /ইনভয়েস এই সব চাইতে পারে।
৭. বিজনেস একাউন্ট হলে বিজনেস লাইসেন্স আইডি ,নাম্বার ও আর কিছু কাগজ চাইতে পারে।
সুতরাং ফেক একাউন্ট নিরাপদ যতক্ষন না পেপাল আপনাকে ধরতেছে। বিষয়টা চোরের দশ দিন গেরস্থের এক দিন প্রবাদের মত। তবে এই ফেক একাউন্টকেও লিগালাইজ করা যাবে। যদি কিছু জিনিষ ঠিক থাকে। তবে সেটা ধরা খাওয়ার আগে এবং আপনাকে একাউন্ট sign up করার আগেই সব কিছু মিলিয়ে নিতে হবে। তবে সেটা শতভাগ কাজ করে কিনা আমার জানা নাই।
এখন প্রশ্ন হল আমি কি ফেক একাউন্ট ইউজ করব ? যদি না করি তাহলে কোনটা করব ?
আমি বলব আপনি অল্প আয়ের ফ্রিল্যান্সার হলে ফেক একাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে দিন শেষে আপনাকে ধরা খেতেই হবে। তবে যদি আপনি মোটামুটি ভাল আয় করেন অথবা কোন টিম রান করেন। তাহলে আমার মতামত হল আপনি এইটা থেকে বিরত থাকুন। এবং লিগ্যাল ওয়েতে আপনার পেপাল টি রেডি করুন।(আমার আগের পোস্ট এর ২ ও ৩ ও ৪ দেখতে পারেন )
পার্সোনাল পেপাল এর চাইতে বিজনেস পেপাল ব্যবহার করা কিছু ক্ষেত্রে সহজ ও নিরাপদ । তাতে কিছু লিগ্যাল সাপোর্ট থাকে।
যাদের আয় ৩০০০+ মাসে তারা ৪ নং ও যেতে পারেন। আপনার জন্য সবচাইতে সেফ হচ্ছে আমার আগের পোস্ট এর ২নং পলিসিতে কাজ করা। কারন এতে আপনার সব কিছু জেনুইন হবে। আপনি পেপাল মার্চেন্ট হিসেবে একাউন্ট ইউজ করবেন। সব মিলিয়ে আপনার বিজনেস ও বাড়বে। এবং সারা দুনিয়া ব্যবসা ব্যবসা প্রসার করার সুযোগ পাবেন।
আমার আগের লেখাটি (১ম পর্ব) দেখুন। আশা করি আইডিয়া পেয়ে যাবেন। তারপর ও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
একটি ভাল বা শক্তিশালী Paypal এর গুণাবলী –
১. ব্যাঙ্ক ভেরিফাইড ২. কার্ড ভেরিফাইড ৩. ফোন ভেরিফাইড ৪. সঠিক ঠিকানা ৫. একটি ইউ এস SSN বা ট্যাক্স আইডি যুক্ত থাকা ইত্যাদি।
তাহলে পেপাল আপনার কাছে সহজে কিছুই চাইবে না। মজার বিষয় হচ্ছে এইটা নিজের নাম করা সম্ভব। ১ ও ২ ভার্চুয়াল গুলো সম্ভব কিন্তু রিয়্যাল গুলো কোন দিন ও সম্ভব নয়। যদিনা আপনি ইউ এস যান বা থাকেন।
এক্ষেত্রে আপনি চেষ্টা করবেন যে আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট যেন আপনার নাম হয়। মোবাইল নাম্বার তা যাতে আপনার নাম থাকে। না হলে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না এখন পর্যন্ত। তবে সাবধানের মাইর নাই।
১ ও ২ নং ভেরিফিকেশন টা ম্যানেজ করুন। ৩ নং টা খুবই সহজ। ৪ ও ৫ নং টা ও সম্ভব। তবে খরচ এবং অনেক বিষয় জড়িত। তাই এড়িয়ে যাচ্ছি। খুব দরকার না হলে বাদ দিন। তারপরও না পারলে গুগল করুন। তারপর ত কমিউনিটি আছে । আমরা আছি।
উপরের আলোচনা থেকে কয়েকটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে আশা করি ।
ফেক একাউন্ট এর নিরাপদ কেমন তা একটা উধাহরন দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি ।
ধরেন-এই মাসের কোন একদিন আপনি কোথাও যাচ্ছেন। পথে একটি নদী পড়ল। প্রকাণ্ড ঝড় আসতে পারে। আপনাকে নদী পার হতে হবে। এমন সময় একটা নৌকা আসল ঘাটে। যার মাঝি ভাল না, বৈইঠা ভাঙা এবং নৌকা নড়বড়ে। মাঝি আপনাকে বলল যে আপনি বিপদের পড়লে তার কিছু করার নাই।মকিন্তু সে বহুদিন ধরে এই জায়গায় নৌকা চালাচ্ছে. অনেকেই নিরাপদে পার হয়েছে এবং ভাড়া মাত্র দুই টাকা।
অন্যদিকে একটি বড় লঞ্চ আসল যেটি মানুষকে সব ধরণের নিরাপত্তা দিতে পারে এমন করে তৈরী করা। ভাড়া ৭ টাকা। সে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে । (দয়া করে এই গল্পে কেউ ভাগ্য বা ধর্মীয় বিষয় টেনে আনবেন না। )
যার যে নৌকা ভাল লাগে উঠে পড়ুন। 🤗
আজকের মত এতটুকুই।
যারা আগের লেখাটি পড়েননি । এই ১ম পর্ব থেকে পড়ে নিতে পারেন। আমার এই লেখায় ভুল থাকতে পারে । ভুল গুলো আলোচনায় নিয়ে আসলে আমরা সবাই উপকৃত হব।
লেখক : আব্দুল্লাহ আল মামুন